হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, নিদা হেকমতনিয়া, হাওযা নিউজের এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ডিজিটাল মিডিয়ার বিস্তারের সাথে সাথে তথ্যের ময়দান একটি প্রতিযোগিতামূলক রূপ নিয়েছে, যেখানে বর্ণনা (narratives) মুখ্য ভূমিকা পালন করে। এই প্রেক্ষাপটে তালেবে ইলমদের গুরুদায়িত্ব হলো শুধু বার্তা পৌঁছে দেওয়া নয়, বরং জনমতের কাঠামো গঠন এবং সমাজে সাংস্কৃতিক দিকনির্দেশনা প্রদান।
তিনি বলেন, মিডিয়া শুধু তথ্য প্রচারের একটি উপকরণ নয়, বরং এটি পরিচয় নির্মাণ বা পরিবর্তনের একটি ক্ষেত্র। সুতরাং তালেবে ইলমদের উচিত এটিকে একটি চিন্তাগত সংগ্রামের ময়দান হিসেবে দেখা এবং এতে সক্রিয় ভূমিকা নেওয়া। শুধু প্রচারে সীমাবদ্ধ না থেকে, তাদের উচিত চিন্তা সৃষ্টি, বর্ণনা গঠন এবং চিন্তাগত নেতৃত্ব প্রদান।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান মিডিয়া বিভ্রান্তিকর তথ্য ও বর্ণনার যুদ্ধে জর্জরিত। বিশ্বাসের ওপর বিভ্রান্তিমূলক প্রভাব পড়তে পারে, এজন্য তালেবে ইলমদের মিডিয়া বিশ্লেষণের দক্ষতা থাকতে হবে।
তিনি আজকের মিডিয়ার আরেকটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করেন-অগভীর ও জনপ্রিয়তানির্ভর বিষয়বস্তুর আধিপত্য। বহু মিডিয়া আজ গভীর চিন্তা থেকে সরে গেছে। তালেবে ইলমদের উচিত অর্থবহ ও প্রভাবশালী বিষয়বস্তু তৈরিতে নেতৃত্ব দেওয়া।
তথ্য বিশ্বে বিশ্বাসযোগ্যতা ও আস্থার চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে তিনি বলেন, মানুষ নির্ভরযোগ্য উৎস খোঁজে। তালেবে ইলমদের উচিত প্রামাণ্য ও বৈজ্ঞানিক তথ্য প্রদান করে তাদের অবস্থান দৃঢ় করা।
তিনি বলেন, জিহাদে তাবয়িন একটি মিডিয়া-ভিত্তিক দায়িত্ব। মিডিয়াকে যদি সংগ্রামের ময়দান ধরা হয়, তবে তালেবে ইলমদের উচিত সত্য বর্ণনা গঠন, প্রশ্নের জবাব এবং চিন্তাগুলোর দিকনির্দেশনা প্রদান। এটি অর্জন সম্ভব মিডিয়া শিক্ষা, আধুনিক প্রযুক্তির জ্ঞান এবং সাংগঠনিক ঐক্যের মাধ্যমে।
তিনি বলেন, মিডিয়ার প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশে প্রবেশের জন্য প্রয়োজন নতুন দক্ষতা, ডিজিটাল টুলস এবং সুনির্দিষ্ট কৌশল। তালেবে ইলমদের উচিত নিজেদের দক্ষতা এমন পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া যাতে তারা প্রভাব বিস্তার করতে পারে।
মিডিয়া শিক্ষা: হাউজার জন্য এক অপরিহার্যতা
তিনি উল্লেখ করেন, মিডিয়া বিশ্লেষণ, লেখালেখি, যোগাযোগ দক্ষতা, মাল্টিমিডিয়া কনটেন্ট তৈরি, কার্যকর শ্রোতা সংযোগ এবং বর্ণনা নির্মাণের কৌশল—এসবকে হাউজার মৌলিক পাঠ্যক্রমে যুক্ত করতে হবে। মিডিয়ায় অংশগ্রহণ শুধুমাত্র ব্যক্তিগত না হয়ে, জনমত গঠনের জন্য একটি সমন্বিত ধারা হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।
তিনি বলেন, নতুন উপকরণ যেমন ডিজিটাল স্টোরিটেলিং, ডকুমেন্টারি নির্মাণ, ভিজ্যুয়াল কমিউনিকেশন ব্যবহার করে ইসলামি বার্তা আরও কার্যকরভাবে পৌঁছাতে হবে।
হেকমতনিয়া আবারও বলেন, মিডিয়া হলো পরিচয় নির্মাণের ময়দান। তালেবে ইলমদের উচিত এটিকে 'জিহাদে তাবিয়িন'–এর প্রধান ক্ষেত্র হিসেবে দেখা। সঠিক মিডিয়া পরিচয় গঠনের মাধ্যমে তারা কেবল বার্তা প্রেরণ করবে না, বরং জনমতকেও প্রভাবিত করবে। আজ হাউজাগুলোর উচিত এই ক্ষেত্রে প্রবলভাবে প্রবেশ করে সঠিক কৌশলে ইসলামের মূল বর্ণনা সমাজের সামনে তুলে ধরা।
তিনি মনে করিয়ে দেন, নারী তালেবে ইলমরা কেবল সত্যের বার্তাবাহক নন, বরং চিন্তা ও সাংস্কৃতিক পরিচয়ের স্থপতিও। তারা যদি মিডিয়াকে ভালোভাবে বুঝে, তবে তারা চিন্তার ধারাগুলোকে কার্যকরভাবে দিকনির্দেশনা দিতে পারবে।
তিনি আরও বলেন, মিডিয়া মাঝে মাঝে সমাজে নারীর বিকৃত রূপ তুলে ধরে। নারী তালেবে ইলমরা গঠনমূলক অংশগ্রহণের মাধ্যমে নারীর মর্যাদা, পরিবারের ভিত্তি সুদৃঢ়করণ ও নারীর সামাজিক অবস্থান বিষয়ে ইসলামী কথোপকথন জোরদার করতে পারে।
তিনি জানান, অনেক নারী তালেবে ইলম মিডিয়াতে কাজ করতে আগ্রহী, কিন্তু কনটেন্ট তৈরি ও বর্ণনা গঠনের প্রয়োজনীয় কাঠামো এখনো সম্পূর্ণভাবে গড়ে ওঠেনি। হাউজাগুলোতে বিশেষ মিডিয়া প্রশিক্ষণ ও কনটেন্ট তৈরির বিভাগ গঠন করা যেতে পারে যাতে তারা পেশাগতভাবে এই ময়দানে প্রবেশ করতে পারে এবং ইসলামী নীতির ভিত্তিতে নিজেদের মিডিয়া পরিচয় গড়ে তুলতে পারে।
তিনি বলেন, মিডিয়া একটি চিন্তা-নেতৃত্বের ময়দান এবং নারী তালেবে ইলমদের উচিত এটিকে সামাজিক প্রভাব বিস্তারের ক্ষেত্র হিসেবে দেখা। নির্ভুল বর্ণনা, সাংস্কৃতিক ও পারিবারিক বিষয়ে ইসলামী কথোপকথন গঠন এবং সমাজের সাথে দৃঢ় সংযোগ—এই তিনটি তাদের মূল দায়িত্ব।
শেষে তিনি বলেন, শিয়া চিন্তাধারার ইতিহাসে হাউজা ও আলেমরা সব সময় হুমকিকে সুযোগে রূপান্তর করেছে। আজও আমরা মিডিয়ার ও নারীদের বিষয়ক হুমকিকে একটি সুযোগে রূপান্তর করতে পারি, কিন্তু এর জন্য প্রয়োজন সুস্পষ্ট কৌশলগত অধ্যয়ন ও সঠিক উপলব্ধি।
আপনার কমেন্ট